Advertisement

মাংস বিক্রেতা বাবার কাছে তালিম, ভুল করে রাত দেড়টায় অনুশীলন! তিন বিশ্বরেকর্ড গড়া হাওড়ার কোয়েলের লক্ষ্য অলিম্পিক্স

News Desk : একটি-দু’টি নয়, তিন-তিনটি বিশ্বরেকর্ড। তা-ও আবার কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে। হাওড়ার সাঁকরাইলের ধূলাগড়ের ব্যানার্জি পাড়ায় কোয়েল বরের বাড়িতে তাই মঙ্গলবার রাত থেকেই আনন্দের শেষ নেই। কোয়েল আগেও রাজ্য এবং জাতীয় পর্যায়ে পদক জিতেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশ্বরেকর্ড গড়ে পদক জেতার আনন্দই আলাদা। তাই কোয়েলের বাবা-মা এখন দিন গুনছেন, কবে ফিরবেন মেয়ে।

কোয়েলের বাবা মাংস বিক্রেতা। দোকান রয়েছে দেউলপুরে। স্বাভাবিক ভাবেই পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা নেই। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও বাবা-মা চাইবেন ছেলেমেয়ে পড়াশোনা শিখে প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু মিঠুন বর আলাদা ভেবেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, মেয়ে পড়াশোনা করুক। তার পাশাপাশি খেলাধুলোও করুক। খেলাধুলোর প্রতি এতটাই ঝোঁক ছিল যে মেয়ে যদি সপ্তাহে রোজ স্কুলে না যেতে পারে তা হলেও চলবে। কিন্তু অনুশীলন অন্তত করুক। ফলে কোয়েল সপ্তাহে দু’-তিন দিন স্কুলে যেত, আর বাকি দিন অনুশীলন করত। এখন সে দেউলপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

পাঁচলার দেউলপুরে সে ভাবে খেলাধুলোর পরিকাঠামো নেই। তবে অষ্টম দাসের তত্ত্বাবধানে ভারোত্তোলন শেখার একটি কেন্দ্র রয়েছে। ২০১৮ সালে সেখানেই মেয়েকে ভর্তি করে দেন মিঠুন। কোয়েলের বয়স তখন দশ। ভারোত্তোলনের প্রাথমিক জ্ঞান তত দিনে বাবার থেকে পাওয়া হয়ে গিয়েছে। সেই থেকেই শুরু। এর পর অষ্টমের প্রশিক্ষণে জেলা থেকে রাজ্য, সেখান থেকে জাতীয় পর্যায়ের একাধিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কোয়েল। পদকও জেতে।

মেয়েকে মানুষ করতে কম কষ্ট পোয়াতে হয়নি মিঠুন এবং তাঁর স্ত্রী শ্রাবণীকে। আনন্দবাজার ডট কম-কে মিঠুন বললেন, “কোয়েলের পাশাপাশি আমার এক ছেলে রয়েছে (সৌম্য বর)। সে-ও ভারোত্তোলক। এখন পুণেতে বিএসএফের সঙ্গে অনুশীলন করে। দু’জনকে অনুশীলনে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা, দু’বেলা দোকান খোলা, কাজ একটুও কম ছিল না। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হত। কিন্তু ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে হাসিমুখে সব কাজ করে দিতাম। এ ভাবে অনুশীলন করিয়ে করিয়েই ওদের এই জায়গায় নিয়ে এসেছি।”

অনুশীলনের প্রতি এতটাই মনোযোগ ছিল যে, মিঠুন একদিন রাত দেড়টায় মেয়েকে নিয়ে মাঠে দৌড়তে চলে গিয়েছিলেন! বললেন, “আমরা মোবাইলে রোজ অ্যালার্ম দিয়ে শুতাম। অন্ধকার থাকতে থাকতেই উঠে পড়তাম। এক দিন সে রকমই উঠে তৈরি হয়ে মাঠে চলে গিয়েছি। কিছু ক্ষণ অপেক্ষার পরেও দেখছিলাম কেউ আসছে না। মাঠের পাশে একটা মন্দির রয়েছে। সেখানকার ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখি, রাত দেড়টা বাজে! নিজেরাই হাসাহাসি করে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। আবার কয়েক ঘণ্টা পরে উঠে মেয়েকে অনুশীলনে নিয়ে গিয়েছি।”

কমনওয়েলথে পদক জেতার পর কোয়েল জানিয়েছে, তার লক্ষ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন করা। এর পর অলিম্পিক্সে যাওয়া। তবে মেয়ের উপর কোনও চাপ দিতে রাজি নন মিঠুন। বললেন, “মেয়ের যেটা ভাল লাগবে সেটাই করুক। আমি কোনও চাপ দিতে রাজি নই। আমি চাই ও আরও নিজেকে উন্নত করুক। এত অল্প বয়সে কমনওয়েলথে রেকর্ড করেছে। ধীরে ধীরে নিজেকে উন্নত করলে আরও ভাল জায়গায় পৌঁছে যাবে।”

অহমদাবাদে ইতিহাস গড়েও এখনই বাড়িতে ফেরা হচ্ছে না কোয়েলের। অহমদাবাদ থেকে সে যাবে উত্তরপ্রদেশে। সেখানেই আপাতত অনুশীলন করে। কয়েক দিন অনুশীলন করে তার পর বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে। মা শ্রাবন্তী বললেন, “ও পটলের তরকারি এবং ইলিশ মাছ খেতে ভালবাসে। ক্যাম্পে ও সব পায় না। বাড়িতে এলে ওর জন্য ওই পদগুলো রাঁধব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *