Advertisement

পাহাড়ের এই বিপর্যয়ের দায় কি শুধুই প্রকৃতির – ভাববার সময় এসেছে

রবীন্দ্রনাথের ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ যারা পড়েছেন, তারা জানেন যে প্রকৃতি এমনই এমনই প্রতিশোধ নেয় না। যদি না প্রকৃতির উপর মানুষের খবরদারি ও দখলদারি বেড়েই চলে।

গত কয়েক বছর ধরে তাই কি হয় নি উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে? বহুদিন আগেই এক পরিবেশবিদ ও পাহাড় বিশেষজ্ঞ দাওয়া লেপচা বলেছিলেন, ‘হিমালয়ের অন্য যে কোনও শহরের মতো দার্জিলিংয়েও বহুতল তৈরি করা উচিত নয়।

নিয়ম অনুযায়ী, এখানে ১১.৫ মিটারের বেশি উঁচু যে কোনও বহুতলই বেআইনি। সবাই সব জানে। কিন্তু মানছে কে! আমাদের লোভ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে কংক্রিটের মধ্যে দিয়ে।

একদিন আমাদেরও উত্তরাখণ্ডের ধারালি বা যোশীমঠের দশা হবে।’ দার্জিলিং বাঁচাতে আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়েরও করেছিলেন তিনি। জবাবে হুমকি জুটেছে হোটেল ব্যবসায়ীদের একাংশের তরফে। গত শনি-রবিবারে পাহাড়জুড়ে প্রকৃতির তাণ্ডব আর মৃত্যুমিছিল দেখতে দেখতে ৪৭ বছর বয়সি দাওয়া লেপচার কথাগুলি কানে বাজছিল।

এখনও সামলে নেওয়ার সময় আছে। শুধু নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে একটু দেশ ও প্রকৃতির কথা ভাবতে হবে। প্রশাসনকে শুধু ভোটের কথা না ভেবে বৃহত্তর মানুষের কথা ভাবতে হবে।

শনিবার রাত থেকে প্রবল বর্ষণ,জাতীয় সড়ক সহ বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ধস, ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তা-তোর্সা-জলঢাকা-রায়ডাকের তোড়ে বানভাসি দশা দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, নাগরাকাটা সহ উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি ও ডুয়ার্স অঞ্চলের।

কোথাও ধসে, কোথাও জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে একাধিক সেতু। রাস্তা বিচ্ছিন্ন। হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। মৃত অন্তত ২৯ জন। নিখোঁজ বহু। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে গন্ডার, হরিণ সহ বহু বন্যপ্রাণী। এই পরিস্থিতি দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি ‘উন্নয়নের’ প্রভাবও পড়েছে উত্তরবঙ্গের এই দুর্যোগে-দুর্ভোগে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, দার্জিলিংয়ের মাটি অত্যন্ত ভঙ্গুর। সেখানে অতিরিক্ত রাস্তা, হোটেল, হোমস্টে এবং রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের চাপ পাহাড়ের ভারসাম্য ধ্বংস করছে। একইভাবে প্রয়োজনমতো নিয়ম-নীতি বদলে কোথাও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নদীর গতিপথ আটকে দেওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার পাহাড় ভেঙে বা বন কেটে তৈরি হচ্ছে হাইওয়ে -রেলপথ।

আর এই সবকিছুই প্রভাব ফেলছে পাহাড়ের ভূ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের উপর। বন কাটার ফলে মাটি নরম হচ্ছে। ধস নামছে পাহাড়ে। আর সেই ধসেই ফুলে উঠছে নদী। যার জলের তোড়ে প্লাবিত হচ্ছে সমতলের শহরগুলি। এমন ঘটনা ঘটলেই মানুষ এর নাম দেয় ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’। কিন্তু এটাই আসলে ‘ম্যানমেড বন্যা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *