Advertisement

এক ম‍্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ় জিতে নিল

এক ম‍্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ় জিতে নিল অস্ট্রেলিয়াপার্‌থের পর অ্যাডিলেডে ২ উইকেটে হেরে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ় হেরে গেল ভারত। সিডনিতে নিয়মরক্ষার ম্যাচ। এক দিনের অধিনায়ক হিসাবে নিজের প্রথম সিরিজ় হারতে হল শুভমন গিলকে।এই বোলিং আক্রমণ দিয়ে আর যা-ই হোক, ম্যাচ জেতা যায় না। অ্যাডিলেডে হারের পর সেটা বুঝে গেলেন শুভমন গিল। নইলে এই মাঠে ২৬৫ রান তাড়া করা সহজ নয়। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার দুই সেরা ব্যাটার মিচেল মার্শ ও ট্রেভিস হেড তাড়াতাড়ি আউট হওয়ার পরে লক্ষ্য আরও কঠিন ছিল। কিন্তু মাঝের ওভারে তো উইকেট নিতে হবে। নইলে কী ভাবে জেতা যাবে? ফলে যা হওয়ার তাই হল। ম্যাথু শর্ট, ম্যাট রেনশ, কুপার কোনোলি, মিচেল ওয়েনের মতো অনভিজ্ঞ ব্যাটারেরা অস্ট্রেলিয়াকে জেতালেন।হারের মধ্যেই ভারতের পক্ষে স্বস্তির খবর রোহিত শর্মার রানে ফেরা। আগের ম্যাচে রান পাননি রোহিত। ফলে এই ম্যাচে শুরুতে ধরে খেললেন। থিতু হওয়ার পর রান তোলার গতি বাড়ালেন। তাঁর সেই পুরনো কিছু পুল শট দেখা গেল। শতরান না পেলেও রোহিতের ফর্ম স্বস্তি দেবে ভারতকে। দল হারলেও নিজের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি জিতে গেলেন। রোহিতের ঠিক উল্টো ছবি কোহলির ব্যাটে। আরও একটি ম্যাচে শূন্য রানে ফিরলেন তিনি। এক দিনের কেরিয়ারে এই প্রথম পর পর দু’ম্যাচে শূন্য রানে আউট হলেন কোহলি। আরও এক বার ব্যর্থ হলেন তিনি। ২২৪ দিনের বিরতির পর ফেরার লড়াইয়ে কোহলিকে হারিয়ে দিলেন রোহিত।ম্যাচে টস হারেন শুভমন। ফলে শুরুতে ব্যাট করতে হয় ভারতকে। আগের ম্যাচে রান না পাওয়ায় এই ম্যাচে সাবধানি শুরু করেছিলেন রোহিত। ধরে খেলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তার পরেও জশ হেজ়লউড ও মিচেল স্টার্কের বল তাঁকে সমস্যায় ফেলছিল। রোহিত ধীরে খেলায় চাপ বাড়ে শুভমনের উপর। এই ম্যাচে দুই বোলার জ়েভিয়ার বার্টলেট ও অ্যাডাম জ়াম্পাকে খেলিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দু’জনেই সফল। বার্টলেটের বল ক্রিজ় ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে ৯ রানে আউট হলেন শুভমন।আশা ছিল, রোহিতের মতো কোহলিও হয়তো ধরে খেলবেন। পার্‌থে নেমে আট বল খেলেছিলেন কোহলি। হেজ়লউড ও স্টার্কের বল সামলাতে পারেননি। পয়েন্ট অঞ্চলে গায়ের জোরে শট মারতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন। অ্যাডিলেডে হেজ়লউড, স্টার্ককেও সামলাতে হয়নি। সামনে ছিলেন অনামী বার্টলেট। তাঁর প্রথম দু’টি বল ছাড়েন কোহলি। দেখে মনে হচ্ছিল, অফ স্টাম্পের বাইরের বল দেখে খেলার চেষ্টা করছেন। তৃতীয় বল ডিফেন্ড করেন। চতুর্থ বল পিচে পড়ে ভিতরে ঢোকে। বলে ব্যাট লাগাতে পারেননি কোহলি। বল গিয়ে লাগে প্যাডের মাঝে। আম্পায়ার সঙ্গে সঙ্গে আউট দেন। রিভিউ নেননি কোহলি। রোহিতের সঙ্গে কথা বলে ফিরে যান। পরে দেখা যায়, বল মিডল স্টাম্পে লাগত।কোহলি যখন ফিরছেন, তখন অ্যাডিলেডের দর্শকেরা উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন। তাঁদের দিকে গ্লাভস তুলে ‘গুডবাই’ জানান কোহলি। মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। অ্যাডিলেড কোহলির অন্যতম প্রিয় মাঠ। এই মাঠে ৯৭৫ রান রয়েছে তাঁর। সেখানেই শূন্য রানে আউট হয়ে হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়েন কোহলি।রোহিত শুরুতে সময় নিলেন। প্রথম ৪০ বলে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ৪০। তার পর এক লাফে তা বেড়ে হল ১০৬। মিচেল ওয়েনের বলে জোড়া ছক্কা মেরে রানরেট বাড়ালেন রোহিত। এক বার হাত খোলার পর পুরনো রোহিতকে দেখা যাচ্ছিল। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন শ্রেয়স আয়ার। ১০ কেজি ওজন কমিয়েছেন রোহিত। ফলে উইকেটের মাঝে অনেক ভাল দৌড়োচ্ছেন। তাই শুধু বড় শটের উপর ভরসা করতে হচ্ছে না তাঁকে। অর্ধশতরান করার পর রান তোলার গতি আরও বাড়ান রোহিত। ঠিক যখন শতরানের আশা জন্মেছে ভারতীয় সমর্থকদের মনে, তখন নিজের পছন্দের পুল মারতে গিয়ে আউট হলেন তিনি। ৯৭ বলে ৭৩ রান করলেন। রোহিতোচিত ইনিংস না হলেও প্রত্যাবর্তনের শুরু বলা যেতে পারে এই ইনিংসকে।রোহিত ছাড়াও রান পেলেন শ্রেয়স। ৭৭ বলে ৬১ রান করলেন তিনি। অক্ষর করলেন ৪৪ রান। ঠিক যখনই মনে হচ্ছিল, ভারত রান তোলার গতি বাড়াবে তখনই উইকেট পড়ছিল। মাঝের ওভারে উইকেট তোলার কাজ করলেন জ়াম্পা। পর পর উইকেট পড়ায় চাপ বাড়ে ভারতের উপর। কিন্তু নবম উইকেটে হর্ষিত রানা (২৪) ও অর্শদীপ সিংহ (১৩) ভারতের রান ২৫০ পার করেন। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ২৬৪ রান করে ভারত। জ়াম্পা ৪ ও বার্টলেট ৩ উইকেট নেন।অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার মার্শ ও হেডও শুরুটা ধীরে করেন। ভারতীয় পেসারেরা তখন নিয়ন্ত্রিত বল করছিলেন। হাত খুলতে না পেরে উশখুশ করছিলেন মার্শ। ১১ রানের মাথায় তাঁকে ফেরান অর্শদীপ। হেড ২৮ রান করে হর্ষিতের বলে আউট হন। তাতে অবশ্য অস্ট্রেলিয়া চাপে পড়েনি। তৃতীয় উইকেটে শর্ট ও রেনশ জুটি বাঁধেন। ভারতকে সমস্যায় ফেলল ক্যাচিং। শর্টের ক্যাচ দু’বার পড়ল। তার মধ্যে মহম্মদ সিরাজ় লোপ্পা ক্যাচ ছাড়লেন। শর্ট করলেন ৭৪। তাঁর ক্যাচ না পড়লে সমস্যা হত অস্ট্রেলিয়ার। খেলা যত গড়াল তত অনিয়ন্ত্রিত বল করলেন ভারতের বোলারেরা। বিশেষ করে হর্ষিত। এই ম্য়াচেও রান দিলেন তিনি। তাঁকে একের পর এক ম্যাচ খেলাচ্ছেন গম্ভীর। কিন্তু হর্ষিতের যা পারফরম্যান্স তাতে তাঁর জাতীয় দলে খেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।শর্ট আউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস টানলেন কোনোলি। তাঁকে সঙ্গ দিলেন ওয়েন। মাঝের ওভার ভারত উইকেট তুলতে পারল না। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যে কাজটা জ়াম্পা করেছিলেন সেটা কেউ করতে পারলেন না। শুভমন বুঝলেন, এই দলে কুলদীপ যাদবের কতটা প্রয়োজন ছিল। তিনি থাকলে হয়তো এতটা সহজে খেলতে পারত না অস্ট্রেলিয়া। উইকেট পড়লে চাপ বাড়ত। যেমনটা দেখা গেল শেষ দিকে। কয়েকটা উইকেট পড়ায় অস্ট্রেলিয়ার জিততে আরও কিছুটা সময় লাগল। কিন্তু তত ক্ষণে খেলার ফয়সালা প্রায় হয়ে গিয়েছে। কোনোলি শেষ পর্যন্ত থাকলেন। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন তিনি। ৬১ রানে অপরাজিত থাকলেন কোনোলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *