শারদোৎসবে পুরোহিত সমাজকে আদর্শ আচরণবিধি শেখাচ্ছে সর্বভারতীয় প্রাচ্যবিদ্যা অ্যাকাডেমি। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে শোভাবাজার রাজবাড়িতে সর্বভারতীয় প্রাচ্যবিদ্যা অ্যাকাডেমির তরফে পুরোহিতদের দেবী মহামায়ার আরাধনার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ভোটের আদর্শ আচরণবিধির মতোই তাঁদের শেখানো হয় কী করণীয়, আর কী নয়। এ বছরও ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সেই প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
হাতেকলমে শারদোৎসবের পূজাপদ্ধতি শেখানোর পাশাপাশি পুরোহিতদের আদর্শ আচরণবিধিও শেখানো হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের মতে, প্রতি বছর দেবীর বোধন থেকে বিসর্জনের পুজোর যাবতীয় পদ্ধতি পুরোহিতদের বিস্তারিত ভাবে শেখানো হয়। এমনকি মণ্ডপে কী ভাবে চণ্ডীপাঠ থেকে নবমীর হোম করতে হবে, তা-ও হাতে ধরে শেখানো হয়। কিন্তু এ বার যে বিষয়টির উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে, তা হল পুরোহিতদের আদর্শ আচরণবিধি। একজন পুরোহিতের আচার-ব্যবহার যজমানের প্রতি কেমন হবে, তা জোর দিয়ে শেখানো হচ্ছে।
সর্বভারতীয় প্রাচ্যবিদ্যা অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশারী বলেন, ‘‘আমাদের কাছে বেশ কিছু পুজো কমিটি পুরোহিতদের আচরণ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিল। যেমন পুজোমণ্ডপে এসে পুরোহিতদের হাত পা না ধুয়েই পুজোয় বসে পড়া, দেবীর আরাধনার মাঝে বেদিতে বসেই চা খাওয়া কিংবা ধূমপান করা। এমনই হরেক রকম অভিযোগ পাওয়ার পরেই এ বছর আমরা পুরোহিতদের আচরণ নিয়ে একটি বিশেষ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যাতে যজমানেরা পুরোহিতদের আচরণ নিয়ে ক্ষুব্ধ না হন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যেমন সুতির কাপড় পরে হিন্দু ধর্মে পুজো করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মণ্ডপে মণ্ডপে পুরোহিতরা সুতির ধুতি পরে পুজো করছেন। তাই আমরা হাতেকলমে প্রশিক্ষিত করেই পুরোহিতদের এ বারের পুজো করতে পাঠাবো।’’
পুজোর দীর্ঘ দিনের পুরোহিত বলছেন, ‘‘দুর্গাপুজোয় চার-পাঁচ দিন ধরে পুজো করতে গিয়ে পুরোহিতদের ক্লান্তি আসতেই পারে। তেমন পরিস্থিতিতে তারা চা বা ধূমপান করে নিজেদের ক্লান্তি দূর করতেই পারেন। এই বিষয়টি পুজো কমিটিগুলিকে নজর রাখতে হবে। তবে পুরোহিতদেরও দায়িত্ব থাকে যাতে যজমানেরা পুরোহিতের আচরণ নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলতে না পারেন। সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ যাতে কোনও ভাবে ধাক্কা না খায়, সেই বিষয়টি নজরে রাখার দায়িত্ব পুরোহিতদেরই।’
বারের প্রশিক্ষণে পুজো করার সময় পুরোহিতদের মোবাইল ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন সর্বভারতীয় প্রাচ্যবিদ্যা অ্যাকাডেমি প্রশিক্ষকেরা। পুজো করার সময় পুরোহিতের মন মোবাইলের দিকে চলে গেলে পুজোর প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। সেই আশঙ্কা করেই এবারের প্রশিক্ষণে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করতে বলা হয়েছে। মূল পুজোর সময় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না বলেই প্রশিক্ষকেরা পুরোহিতদের জানিয়েছেন। মোবাইলে কম ব্যবহারও পুরোহিতদের আদর্শ আচরণবিধির মধ্যেই পড়ে বলে মনে করছেন প্রশিক্ষকেরা। এ বছর প্রায় ১৫০ জন পুরোহিতকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপর্ব শেষ হলে তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হবে। কোনও পুরোহিত যদি ধারাবাহিক ভাবে প্রশিক্ষণ পর্ব থেকে বিরত থাকেন, তা হলে তাঁকে শংসাপত্র দেওয়া হবে না বলেই
















Leave a Reply