89 বছরে নিভল জীবন প্রদীপ । প্রয়াত বলিউডের হি-ম্যান ধর্মেন্দ্র । আগামী মাসের 8 ডিসম্বরে জীবনের 90তম বসন্ত উদযাপন আর করা হল না ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা’ অভিনেতার । মঙ্গলবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবীণ অভিনেতা ৷ সোশাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ৷বিগত কয়েকদিন ধরেই স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ধর্মেন্দ্র । জানা গিয়েছিল, তিনি শ্বাসজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন । কিন্তু সোমবার আচমকাই অবস্থার অবনতি হয় । চিকিৎসকেরা তৎক্ষনাৎ অভিনেতাকে ভেন্টিলেশনে রাখেন । সব রকম প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে তারাদের দেশে পাড়ি দিলেন বিটাউনের ‘ফরিস্তে’ ।ধর্মেন্দ্র-র জন্ম-শৈশব-পড়াশোনা1935 সালের 8 ডিসেম্বর পঞ্জাবের লুধিয়ানার নাসরালিতে জাট পরিবারে জন্ম ধর্মেন্দ্রর । বাবার নাম কেওয়াল কৃষাণ ও মায়ের নাম সৎওয়ান্ত কৌর । বাবা ছিলেন গ্রামের স্কুল মাস্টার । 1952 সালে তিনি স্কুল পাশ করেন ।19- বছর বয়সে প্রথম বিয়েস্কুল পাশ করার মাত্র 2 বছরের মাথাতেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন ধর্মেন্দ্র । তখনও তিনি সিনেমার জগতে প্রবেশ করেননি । 1954 সালে মাত্র 19 বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন প্রকাশ কৌরকে । 1957 সালে তাঁর প্রথম সন্তান সানির জন্ম হয় । 1969 সালের 27 জানুয়ারি জন্ম হয় দ্বিতীয় সন্তান বিজয় সিন দেওল অর্থাৎ ববির ।ফিল্মি দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশজানা যায়, সিনেমার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল ধর্মেন্দ্রর । এমনকী, ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের তরফে অভিনয়ে নতুন প্রতিভা খোঁজার প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন ধর্মেন্দ্র । সেই সূত্র ধরে তিনি মুম্বই আসেন সিনেমার অভিনয় করার জন্য । কিন্তু সেই সিনেমা কখনও তৈরিই হয়নি । ভাগ্যের চাকা ঘোরে 1960 সালে । যখন তিনি সুযোগ পান অর্জুন হিঙ্গোরানির রোমান্টিক ড্রামা দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে সিনেমায় । তবে প্রথম সিনেমা মুখ থুবড়ে পড়ে বক্সঅফিসে । সাফল্য ধরা দেয় 1961 সালে যখন মুক্তি পায় রমেশ সাইগলের শোলো অউর শবনম । এরপর 1962 সালে মুক্তি প্রাপ্ত মোহন কুমারের অনপড় অভিনেতা হিসাবে স্বীকৃতি দেয় ধর্মেন্দ্রকে । এর পরের বছর অর্থাৎ 1963 সাল, ধর্মেন্দ্রকে বলিউডে শক্ত জায়গা করে দেয় বিমল রায়ের বন্দিনী । সেই বছর এই সিনেমা বেস্ট ফিচার ফিল্ম ইন হিন্দি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল ।অভিনেতা হিসাবে ধর্মেন্দ্রকে একটু একটু দর্শক চিনতে শুরু করেছে। 1964 সালে রাজেন্দ্র কুমার ও সায়রা বানু অভিনীত মোহন কুমারের আয়ি মিলন কি বেলা মুক্তি পায় । সেই সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে সকলের নজরে আসেন ধর্মেন্দ্র । বক্সঅফিসে সিনেমাটি ব্যাপক হিট হয় । সিনেমা হিটের তকমা পেলেও বিনোদন ইন্ডস্ট্রিতে নিজের পরিচয়ের লড়াই তখনও চালিয়ে যেতে হচ্ছিল ধর্মেন্দ্রকে । ছয়ের দশকে তিনি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমায় কাজ করেন । যার মধ্যে রয়েছে ফুল অউর পাথ্থর, মমতা, অনুপমা, আযে দিন বাহার কে, সত্যকাম ইত্যাদি ।সাতের দশক-ধর্মেন্দ্রর সুপারস্টারডমএই সময়ে ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে পর্দায় আবীর্ভাদ হয় হেমা মালিনীর । এই জুটির প্রথম সিনেমা সত্যেন বোসের জীবন মৃত্যু । যা সুপারহিট হয় । এরপর হেমার সঙ্গেই তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান ও শরাফত মুক্তি পায় । এইদুটি সিনেমাও সাফল্যকে ছুঁয়ে ফেলে ।1971 সালে রাজ খোসলার মেরা গাঁও মেরা দেশ অল টাইম ব্লকব্লাস্টারের তকমা পায় । আর দর্শকদের সামনে ধরা পড়ে ধর্মেন্দ্রর অ্যাকশন হিরো ইমেজ । একে একে উপহার দেন সীতা অউর গীতা, রাজা জানি, সমাধির মতো সুপারহিট সিনেমা । এরপর ধর্মেন্দ্র পেয়ে যান সুপারস্টার-এর তকমা ।অমিতাভ-ধর্মেন্দ্র জুটি তৈরি করে ইতিহাস1975 সালে ধর্মেন্দ্রকে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে দুটি সিনেমায় দেখা যায় । চুপকে চুমকে ও শোলে । রমেশ সিপ্পি পরিচালিত 1975 সালের 15 অগস্ট মুক্তি পাওয়া সিনেমা শোলে তৈরি করে ইতিহাস । 50 বছর ধরে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে এই সিনেমা কাল্ট হয়ে রয়ে গিয়েছে । এরপর ধরমপাজির উল্লেখযোগ্য সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নেয়, ‘ইনসাফ কৌন করেগা’, ‘বেগানা’, ‘বাজি’, ইত্যাদিবয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিনেতা হিসাবে নিজের ইমেজ বদলাতে থাকেন ধর্মেন্দ্র । প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া, কিস কিস কি কিসমত, লাইফ ইন আ মেট্রো, জনি গদ্দার তারই প্রমাণ । এছাড়াও ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা কিংবা রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানির মতো সিনেমায় বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখিয়েছেন ধরেমেন্দ্র ।পুরস্কার-সম্মাননাঘায়েল সিনেমার জন্য 1990 সালে বেস্ট পপুলার ফিল্ম প্রোভইডিং হোলসাম এন্টারটেনমেন্ট- বিভাগে জাতীয় পুরস্কার জেতেন ধর্মেন্দ্র ।মোট 9 বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে নমিনেশন পেলেও হাতে পেয়েছেন মাত্র 2টো । ঘায়েল সিনেমার জন্য একটি ফিল্মফেয়ার পান 1991 সালে । ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার পান 1997 সালে । 2012 সালে বিনোদন জগতে অবদানের জন্য তিনি পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন ।
প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র
















Leave a Reply